জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক এর যৌথ আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন

নিউইয়র্ক, ১৭ মার্চ ২০১৮:

আজ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল যৌথভাবে, যথাযোগ্য মর্যাদায় ও অসংখ্য শিশুর আনন্দঘন উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৮ উদযাপন করে। এতে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শতাধিক বাঙালি শিশু-কিশোর। পুরো মিলনায়তন পরিণত হয় শিশুমেলায়।

এর আগে গত ১০ মার্চ উপরিউক্ত প্রতিষ্ঠান দু’টির যৌথ আয়োজনে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সিটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল-এর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাঙ্কণ ও রচনা প্রতিযোগিতা। বয়সের ভিত্তিতে শিশুদের ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের জন্য নির্ধারিত ছিল চিত্রাঙ্কণ আর এর বিষয় ছিল যথাক্রমে ‘বাংলাদেশের প্রকৃতি’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ’। আর ‘গ’ গ্রুপের জন্য নির্ধারিত ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা’ বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা। রঙতুলি আর বর্ণিল সাজে আয়োজিত এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন খ্যাতিমান প্রবাসী চিত্রশিল্পী তাজুল ইমাম, ওবায়দুল্লাহ মামুন ও মিজ্ কানিজ ফাতেমা। চিত্রাঙ্কণ ও রচনা প্রতিযোগিতায় স্থানীয় প্রবাসী বাঙালি, বাংলাদেশ মিশন ও কনস্যুলেট পরিবারের ৭৬ জন শিশু অংশগ্রহণ করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, এনডিসি। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, “জাতির পিতার সম্মোহনী নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি প্রিয় বাংলাদেশ। বাঙালির জীবনে এমন কোন অধ্যায় নেই, এমন কোন পর্ব নেই যেখানে ন্যায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ কণ্ঠ স্বোচ্ছার হয়নি”। তিনি আরও বলেন, “জাতির পিতা শিশুদের ভালোবাসতেন। যা আমাদের জন্য একটি অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে বেঁচে আছে”।

অনুষ্ঠানটিতে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।

বানী পাঠের পর সমবেত শিশুদের উদ্দেশ্যে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, শহীদ পরিবারের সন্তান ড. মাসুদুল হাসান। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান উপস্থিত শিশু-কিশোরদের অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারা শিশু-কিশোরদেরকে এই অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছেন। চিত্রাঙ্কণ ও রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। এর থেকে প্রতীয়মান হয় আপনারা প্রবাসে থাকলেও দেশকে ও বঙ্গবন্ধুকে ভুলেননি”। প্রতিটি শিশু যাতে জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বড় হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান”।

এরপর শুরু হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশুদের নৃত্যের প্রেক্ষাপটে “শোনো, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি” গানটির সূর-মূর্ছনা অনুষ্ঠানটিতে সৃষ্টি করে ভিন্ন রকম এক আবহ। নৃত্যানুষ্ঠানটি পরিবেশন করে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শতদল’। সাংস্কৃতিক পর্বে সহযোগিতা করে বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতন। শিশুদের আবৃত্তি ও সংগীত ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন ছিল অত্যন্ত আর্কষনীয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, “আমাদের উচিত প্রত্যেক শিশুকেই জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সমন্ধে জানানো। জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিশুরা বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক গৌরবের বিষয় জানার সুযোগ পাচ্ছে যা তাদেরকে আগামী দিনের সুনাগরিক হতে অনুপ্রেরণা যোগাবে”।

স্বল্পোন্নতদেশের ক্যাটাগরি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার সাফল্যের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের সকল নির্ণায়ক পূর্ণ করেছি। জাতিসংঘ থেকে এসংক্রান্ত স্বীকৃতিপত্র পেয়েছি। আমরা   উন্নয়নশীল দেশের পথে, আরও উন্নত হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম”।

রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বিনির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে উন্নত-সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হবে মর্মে রাষ্ট্রদূত মাসুদ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

এরপর চিত্রাঙ্কণ ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে “বঙ্গবন্ধু ক্রেস্ট”, জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ইংরেজি ভার্সন “দ্যা আনফিনিস্ড মেমোর্য়াস” পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদান করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতায় ক-গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে শিশু আলিনা রহমান এবং খ গ্রুপে শিশু আয়মান হুমায়রা রিয়া। রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে দামিতা সৌরিন সবুর। সকল অংশগ্রহণকারী শিশুকে সনদপত্র এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে রচিত গ্রাফিক নভেল চিত্রণ কার্টুন বই প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণ শেষে সমবেত শিশুরা কেক কেটে জাতির পিতার জন্মদিন উদযাপন করে।

অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক প্রবাসী বিশিষ্ট বাংলাদেশী নাগরিকগণ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী ও মিডিয়া প্রতিনিধিসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি উপস্থিত ছিলেন।

***