জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ভিন্ন আবহে উদযাপন করা হলো বাংলা নববর্ষ- ১৪২৫ আমন্ত্রিত ভিনদেশী অতিথিগণ সুর মেলালেন বাঙালির এ প্রাণের উৎসবে

নিউইয়র্ক, ১৯ এপ্রিল ২০১৮:

আবহমান বাঙালি উৎসব; বাঙালির প্রাণের উৎসব, বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ উদযাপন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে। মিশনস্থ বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে যোগ দেন ‘ইউনাইটেড ন্যাশন্স ডেলিগেশন্ উইমেন’স ক্লাব এর সদস্যগণসহ বিভিন্ন স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক পরিবারের স্পাউজ ও নারী কূটনীতিকগণ। জাতিসংঘে নিযুক্ত অষ্ট্রেলিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত জিলিয়ান বার্ড (Gillian Bird), ত্রিনিনাদ ও টোবাগো’র স্থায়ী প্রতিনিধি মিজ্ পেনিলোপে বেকলেস্ (Pennelope Beckles) সহ বেশ কয়েকটি দেশের নারী রাষ্ট্রদূতগণ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাকের স্ত্রী মিজ্ জার্মিলা ল্যাজাকোভা (Jarmila Lajcakova) অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল ও প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির বরেণ্য নারীরা। নারীদেরকে প্রাধান্য দিয়ে আয়োজিত এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি প্রবাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে একটি ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।

মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনকে আবহমান বাঙালির সংস্কৃতির অসংখ্য উপাদান যেমন ঢাক-ঢোল-একতারা, পালতোলা নৌকা, ডালা-কুলা, তালপাতার পাখা, নকশী কাঁথা, মাটির পুতুল, মাটির থালা-বাসুন, কাঁচের চুড়ি, মাছ ধরার পোলো, পালকি, পাটের সুতার সিকা, আলপনা ও নানা-বর্ণের ব্যানার-ফ্যাস্টুন-বেলুন ও শাড়ী দিয়ে সাজানো সাজানো হয়।

বেলা তিনটায় মেহমানদের অভ্যর্থনা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এর সহধর্মীনি মিসেস ফাহমিদা জাবিন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রার উপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। মিশনের কূটনীতিকদের স্ত্রী ও কন্যারা সম্মিলিত কন্ঠে পরিবেশন করে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি। এছাড়া ‘তাকধুম তাকধুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল’ সহ বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করে মিশন পরিবারের শিশুরা। স্থানীয় ‘সৃষ্টি একাডেমি অব পাফর্মিং আর্টস’ এর নারী সদস্যগণ বিভিন্ন দেশীয় ফোক গানের সাথে দলীয় ও একক নৃত্য পরিবেশন করে যা ছিল অনুষ্ঠানটির সবচেয়ে উপভোগ্য অংশ। সৃষ্টি একাডেমির পরিবেশনার পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্ট্গ্রামের মারমা সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী একটি নৃত্যও পরিবেশিত হয় অনুষ্ঠানে।

বিচিত্র রং এর সমাহারে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয় পুরো আয়োজন জুড়ে। সৌন্দর্য্যরে চ্ছটায় তৈরি হয় এক অনাবিল শান্তির আবহ। বাঙালির সংস্কৃতির এই উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করে বিদেশীদের পরে আসা বৈচিত্রময় পোশাক। উপস্থিত বাঙালিরাও রং-বেরংয়ের দেশীয় পোশাক পরে উৎসবে যোগ দেন।

খাবারের আয়োজনে ছিল আটপৌরে বাঙালি আমেজ। ঘরে তৈরী পিঠা-পুলি-পায়েস, ক্ষীর, ভাত-মাছ, পোলাও, কাবাব, চটপটি, মুড়ি-মুড়কি-মুয়াসহ নানা ধরনের মসলাযুক্ত বাঙালি খাবারের পদ। অনুষ্ঠানে র‌্যাফেল ড্র এর আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানটিতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিদেশী মেহমানদের সামনে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরবণ তুলে ধরেন। তিনি জানান বাংলা বর্ষবরণের এই ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলা নববর্ষের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ উইমেন ক্লাবের সভাপতি মিজ্ তেরিসে টমমো মন্তি (Therese Tommo Monthe) এবং কোষাধ্যক্ষ মিজ্ রানজু ভাটরা (Ranju Batra)। বাংলাদেশী নারী কূটনীতিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মিশনের কাউন্সিলর সঞ্চিতা হক।

সবশেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এর সহধর্মীনি মিসেস ফাহমিদা জাবিন।

বিদেশী মেহমানগণ বাঙালি আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিকতায় মুগ্ধ হন এবং এ আয়োজনের ভূয়সি প্রশংসা করেন।

***