জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জরুরী বিশেষ সেশন -‘ফিলিস্তিনী বেসমারিক নাগরিকদের সুরক্ষা’শীর্ষক রেজুলেশন পাস

নিউইয়র্ক, ১৩ জুন ২০১৮:

আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘পূর্ব জেরুজালেমসহ ও সকল অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে ইসরাইলের অন্যায় হামলা (Illegal Israeli action in occupied East Jerusalem and the rest of the Occupied Palestinian Territory)’ বিষয়ে এক জরুরী বিশেষ সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণ পরিষদের এই ১০ম জরুরী বিশেষ সেশনে ‘ফিলিস্তিনী বেসমারিক নাগরিকদের সুরক্ষা (Protection of the Palestinian civilian population) শীর্ষক একটি রেজুলেশন পাশ হয়। রেজুলেশনটিতে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ/পরীক্ষা করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ইসরাইলী দখলদারিত্বে থাকা ফিলিস্তিনী সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতের জন্য এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় সম্ভাব্য উপায়সমূহ প্রস্তাব আকারে পেশ করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়। আরব গ্রুপ এবং ওআইসি যৌথ উদ্যোগে আনীত এই রেজুলেশনের পক্ষে ভোট পড়ে ১২০টি, বিপক্ষে ৮টি এবং ভোটদানে বিরত থাকে ৪৫টি দেশ। বাংলাদেশ এই রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দেয়।

এর আগে গত পহেলা জুন ফিলিস্তিনের বেসমারিক নাগরিকদের সুরক্ষা বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে কুয়েত একই ধরণের একটি রেজুলেশন উত্থাপন করে। কিন্তু পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে কুয়েত উত্থাপিত এই রেজুলেশন নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়নি। রেজুলেশনটি পাশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের এই ব্যর্থতার পটভূমিতে আরব গ্রুপ এবং ওআইসি’র অনুরোধের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি এ বিষয়ে ১০ম জরুরি বিশেষ সেশনের আহ্বান করে যা আজ অনুষ্ঠিত হল। আরব লীগের পক্ষে আলজেরিয়া এবং ওআইসি সামিটের পক্ষে তুরস্ক সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে বিশেষ সেশন অনুষ্ঠানের এ আহ্বান জানায়।

স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় শুরু হওয়া এই জরুরী বিশেষ সেশনের সভাপতিত্ব করেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাক (Miroslav Lajčák)। অনুষ্ঠানটির শুরুতেই স্বপক্ষে যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদে রেজুলেশনটি উত্থাপন করেন আলজেরিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত সাবরি বৌকাদুম (Sabri Boukadoum)। যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি (Nikki Haley) আলজেরিয়া উত্থাপিত এই রেজুলেশনে একটি কাউন্টার অ্যামেন্ডমেন্ট আনেন। এতে হামাসের রকেট নিক্ষেপের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে একটি প্যারা সংযোজনের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও বিভিন্ন গ্রুপের বক্তব্য শেষে শুরু হয় রেজুলেশন গ্রহণ সংক্রান্ত কার্যক্রম। শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র আনীত ‘কাউন্টার অ্যামেন্ডমেন্ট’এর বিপরীতে আরব গ্রুপ এবং ওআইসি’র পক্ষে আলজেরিয়া ‘নো অ্যাকশন মোশন’অর্থাৎ সাধারণ পরিষদে অ্যামেন্ডমেন্টটি যাতে বিবেচিত না হয় সে প্রস্তাবনা উত্থাপন করে। ‘নো অ্যাকশন মোশন’প্রস্তাবনাটি ভোটে পাশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র আনীত সংশোধনী প্যারাটি বাতিল হয়ে যায়। এরপর ভোটে যায় ‘ফিলিস্তিনী বেসমারিক নাগরিকদের সুরক্ষা’শীর্ষক রেজুলেশনটি যার পক্ষে ১২০টি ভোট পড়ায় এটি সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়।

ওআইসি’র চলতি সভাপতি হিসাবে এই সভায় বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে আগ্রাসী ইসরাইল কর্তৃক বেসমারিক ফিলিস্তিনী নাগরিদের উপর বর্বরোচিত হামলায় সৃষ্ট ভয়াবাহ পরিস্থিতির বিষয়ে ওআইসি’র গভীর উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “আমরা নিরীহ বেসমারিক নাগরিকদের উপর এ ধরণের উদ্দেশ্য প্রণোদিত, পদ্ধতিগত ও বেআইনী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। সম্প্রতি ইসরাইলের ন্যাক্কারজনক এই হামলার শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন কমপক্ষে ১২৯ জন বেসমারিক ফিলিস্তিনী নাগরিক। যারমধ্যে রয়েছে ১৬ জন শিশু। আর আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৬০০ জন যাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন”।

গুরুতর এই পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এবং ‘ওআইসি কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টারস্’ও ‘৭ম এক্সট্রা অর্ডিনারি ইসলামিক সামিট’এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওআইসি রেজুলেশনটি সাধারণ পরিষদে উত্থাপনে আরব গ্রুপের সাথে কো-স্পনসর করেছে মর্মে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। বেসমারিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও জীবন বাঁচানো, গাজা ভূখন্ডকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে উত্তরণ, তীব্র উত্তেজনা প্রশমন, এ অঞ্চলে শান্তভাব বজায় রাখাসহ সকল বেসমারিক নাগরিকদের উপর সহিংসতা বন্ধের উদ্দেশ্যে আনীত এই রেজুলেশনকে জোর সমর্থন জানাতে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

রেজুলেশনটি ফিলিস্তিনী সংকটের ন্যায়সঙ্গত, টেকসই, ব্যাপকভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে দশকের পর দশক ধরে গৃহীত প্রচেষ্টাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীনতা, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সমুন্নত রেখে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাও তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

সাধারণ পরিষদের এই ১০ম জরুরী বিশেষ সেশনে আরও বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিন, ইসরাইল, তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাম, দক্ষিণ আফ্রিকা, বলিভিয়া ও ভ্যাটিক্যানের প্রতিনিধিগণ।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ গত মে মাস থেকে ওআইসি’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে।

***