জাতিসংঘের চলতি হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও ভূমিকা। ‘মন্ত্রী পর্যায়ের ষোষণা’র খসড়া তৈরি করল বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়া

নিউইয়র্ক, ১১ জুলাই ২০১৮ :

গত ৯ জুলাই থেকে জাতিসংঘে শুরু হয়েছে হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম বা এইচএলপিএফ এর অধিবেশন। এবারের এইচএলপিএফ-এ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) এর প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়াকে মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণার (Ministerial Declaration) খসড়া তৈরি করার জন্য কো-ফ্যাসিলিটেটর নিয়োগ করে। উল্লেখ্য এইচএলপিএফ এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর আউটকাম ডকুমেন্টস্ অর্থাৎ মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণা। অধিবেশনের শেষ দিনে গৃহীত এই মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণা সদস্যদেশসমূহের নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। প্রতিবছর ইকোসক দুটি দেশকে এই মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণার খসড়া তৈরি করার জন্য কো-ফ্যাসিলিটেটর নিয়োগ করে। বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়া দায়িত্ব পাওয়ার পর খসড়া ঘোষণা তৈরির জন্য গত ২৫ জুন থেকে সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে নেগোশিয়েশনের কাজ শুরু করে। আজ চূড়ান্ত নেগোশিয়েটেড ডকুমেন্ট ইকোসকে জমা দেওয়া হয়েছে। এবারের এইচএলপিএফ এর মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণা গৃহীত হতে যাচ্ছে অধিবেশনের শেষ দিন ১৮ জুলাই।

টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে এইচএলপিএফ হচ্ছে জাতিসংঘের মূল প্লাটফর্ম। টেকসই উন্নয়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য জাতিসংঘের হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম (এইচএলপিএফ) প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয় ২০১২ সালে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের অধীনে প্রতিবছর আট দিনের জন্য এইচএলপিএফ -এর বৈঠক বসে যার মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিদের জন্য নির্ধারিত থাকে তিন দিন। এছাড়া সাধারণ পরিষদের আওতায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের নিয়ে প্রতি চার বছর পর দুই দিনের জন্য ফোরামটির শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা হয়। এইচএলপিএফ এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ এবং এর লক্ষ্যসমূহের (এসডিজিস্) বৈশ্বিক ফলোআপ ও রিভিউর জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে এইএলপিএফ মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। ২০১৫ সালে এজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণের পর এবছর জাতিসংঘের তৃতীয় হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফলোআপ ও রিভিউ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্ব স্ব দেশের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় জাতীয় ও উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে এজেন্ডা ২০৩০ এর নিয়মিত ও সামগ্রিক পর্যালোচনার জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এইচএলপিএফ উৎসাহিত করে থাকে। এজেন্ডা ২০৩০ এর এই নিয়মিত ও সামগ্রিক পর্যালোচনাকে বলা হয় ভিএনআর বা ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ। ভিএনআর স্বপ্রণোদিত এবং রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন একটি প্রক্রিয়া যা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য। এটি সরকার ও মূল গ্রুপসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের জন্য অংশীদারিত্বের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে। বাংলাদেশ গতবছর ৪২টি দেশের সাথে ভিএনআর-এ অংশগ্রহণ করে এবং পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেতৃত্বে ইকোসকে বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক জাতীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। এমডিজি’র সফল বাস্তবায়নের পর এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও এক্ষেত্রে প্রদত্ত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি জাতিসংঘসহ সকল সদস্যরাষ্ট্রের দ্বারা প্রশংসিত হয়। এবছর ৪৭টি দেশ ভিএনআর এ অংশ নিচ্ছে।

চলতি এইচএলপিএফ -এ যে সকল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পর্যালোচনা করা হবে তা হলো এসডিজি-৬ (পানি বিষয়ক), এসডিজি-৭ (জ্বালানী বিষয়ক), এসডিজি-১১ (টেকসই নগর বিষয়ক), এসডিজি-১২ (টেকসই ভোগ্য পন্য ও উৎপাদন বিষয়ক), এসডিজি-১৫ (জীববৈচিত্র্য বিষয়ক) এবং এসডিজি-১৭ (বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বিষয়ক)।

এইচএলপিএফ- এ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল :

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বেশকিছু সাইড ইভেন্টের আয়োজন ও অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামীকাল (১২ জুলাই) ‘লিভিং নো অন বাহাইন্ড থ্রু ডেটা রেভ্যুলেশন’ এবং ‘পার্টিসিপেশন অ্যাপরোসেজ টু স্যানিটেশন লার্নিং ফরম বাংলাদেশ’ শিরোনামে দুটি সাইড ইভেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ‘পার্টিসিপেশন অ্যাপরোসেজ টু স্যানিটেশন’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টটিতে বক্তব্য রাখবেন। অন্যটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের এসডিজি বিষয়ক কো-অডিনেটর আবুল কালাম আজাদ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছে সাইড ইভেন্ট দুটিতে।

এইচএলপিএফ-এর মন্ত্রী পর্যায়ের পর্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব ও কান্ট্রি স্টেটমেন্ট প্রদান করবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এছাড়া এবার বাংলাদেশ ভিএনআর ল্যাবে অংশ নিচ্ছে যা ভিএনআর ফলোআপের ক্ষেত্রে একটি নতুন মেকানিজম। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এইচএলপিএফ এর মূল পর্বে এসডিজি-১৭ এর রিভিউ সেশনে একজন প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী ১৬ জুলাই স্থানীয় মিলেনিয়াম হোটেলে “সাপোর্ট টু এলডিসিজ টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন” শীর্ষক ইভেন্টে যোগদান উপলক্ষে নিউইয়র্ক আসছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ উগান্ডা ও জার্মানীর সাথে গ্লোবাল পার্টনারশীপ ফর ইফেক্টিভ ডেভোলপমেন্ট কো-অপারেশন (জিপিইডিসি) এর কো-চেয়ার হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ও অন্যান্য কো-চেয়ারগণ জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মিজ্্ আমিনা মোহাম্মদ এর সাথে বৈঠক করবেন মর্মে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক ডেভোলপমেন্ট ইফেকটিভনেস ফ্রেমওয়ার্ক (এপিডিইএফ) এর কো-চেয়ার হিসেবে আরও কয়েকটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবে।

***