জাতিসংঘের ‘শান্তির সংস্কৃতি’বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম -এর সাধারণ আলোচনা রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মানবিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনার ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে -পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীমো: শাহরিয়ার আলম এমপি

নিউইয়র্ক, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮:

“বৈশ্বিক মানবিক চাহিদা (global humanitarian appeal) অনুযায়ী ২০১৭ সালে বৈশ্বিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনার মানবিক ও অর্থনৈতিক ব্যয় ২৩.৫ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যা ছিল সর্বোচ্চ। আর মিয়ানমারের সাথে আমাদের সীমান্ত এলাকায় এ যাবত কালের মধ্যে সংঘটিত সর্বাপেক্ষা বড় মানবিক বিপর্যয় অর্থাৎ প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়দানের কারণে মানবিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে ভয়াবাহ বিপর্যয়ের পাশাপাশি এই ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে” -আজ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ‘শান্তির সংস্কৃতি’বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম (UN High Level Forum on the Culture of Peace) -এর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম এমপি।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৭৪ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ভাষণের বৈশ্বিক শান্তি বিষয়ক উদ্বৃতি -“মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এই শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের সকল নর-নারীর গভীর আশা-আকাক্ক্ষা মূর্ত হয়ে রয়েছে” যা প্রতিমন্ত্রী এই সভায় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ -আমাদের পররাষ্ট্র নীতির এই মূলমন্ত্র থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই শান্তির সংস্কৃতির প্রবক্তা।

‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের সরকারের সময় জাতিসংঘে উত্থাপন করা হয় মর্মে জানান প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের এই প্রস্তাব ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এজেন্ডাভুক্ত হয় যা ১৯৯৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্রোগ্রাম অব অ্যাকশান অন কালচার অব পিস’ শিরোনামে ৫৩/২৪৩ নম্বর রেজুলেশন হিসাবে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়”। আগামী ৭৩তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যখন রেজ্যুলেশনটির ফলোআপ করা হবে তখন সকল সদস্য রাষ্ট্র ১৯৯৯ সালে গৃহীত এই ডিক্লারেশনের ২০ বছর পূর্ণ করবে মর্মে প্রত্যাশার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তিনি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ সবময়ই জাতিসংঘের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ও ‘টেকসই শান্তি’বিষয়ক পদক্ষেপে নিবেদিত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ এবছর এপ্রিলে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ‘শান্তি বিনির্মাণ ও টেকসই শান্তি’বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশ ডেলিগেশনের নেতৃত্ব দেন। এর আগে মার্চে লিথুনিয়াকে সাথে নিয়ে আমরা একই বিষয়ে সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন কো-ফ্যাসিলেটেট করেছি”। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তির সংস্কৃতির অত্যুৎসাহী একজন প্রবক্তা হিসেবে সদ্য প্রয়াত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।

অনুষ্ঠানটিতে আরও বক্তব্য রাখেন নবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইউনেস্কোর শুভেচ্ছা দূত ড. রিগোবার্তা মেনচু তুম (Dr. Rigoberta Menchú Tum)। স্বাগত ভাষণ দেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাক (Miroslav Lajčák)। জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তাঁর শেফ দ্যা কেবিনেট মারিয়া লুইজা রিবেইরো ভিয়োট্টি (Ms. Maria Luiza Ribeiro Viotti )।

শান্তির সংস্কৃতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এই ফোরামের দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকালে ‘শান্তির সংস্কৃতি: টেকসই শান্তির নিশ্চিত পথ (The Culture of Peace: A Credible Pathway to Sustain Peace)’ শিরোনামে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিজ্ রোজম্যারি এ ডিকারলো (Rosemary A. DiCarlo), মেক্সিকোর স্থায়ী প্রতিনিধি জুয়ান জোসে গোমেজ ক্যামাচো (Juan José Gómez Camacho), কেনিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি লাজারুস ওমবাই অ্যামায়ও (Lazarus Ombai Amayo), প্রখ্যাত শান্তি বিষয়ক শিক্ষাবিদ মিজ্ মারিয়ে পাওলি রোওডিল (Marie Paule Roudil) এবং অধ্যাপক মিজ্ র‌্যাচেল অ্যালেন (Rachel Allen)। প্যানেল আলোচনাটিতে সিভিল সোসাইটির ব্যাপক উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। প্যানেল আলোচনা অংশের মডারেটর ছিলেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী।

দিনব্যাপী আয়োজিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যও দেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিরোস্লাভ লাইচ্যাক। তাঁর পক্ষ থেকে এই সাধারণ আলোচনার উপর একটি সার-সংক্ষেপও তৈরি করা হবে।

***