প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দারিদ্র্য মোকাবিলায় আমাদের সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞার ফলেই প্রথমবারের মতো এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ -জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন

নিউইয়র্ক, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ :

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দারিদ্র্য মোকাবিলায় আমাদের সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞার ফলেই এবার প্রথমবারের মতো এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ”আজ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে চলতি ৭৩তম অধিবেশনের দ্বিতীয় কমিটিতে ‘দারিদ্র্য বিমোচন ও অন্যান্য উন্নয়ন ইস্যু’ সংক্রান্ত আলোচনায় একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

“টেকসই উন্নয়নের ধারণা অধরাই থেকে যাবে যদি আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হই” -গত বছর এসডিজি’র বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ক (ভিএনআর) জাতীয় রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত এই উদ্বৃতি রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে উল্লেখ করে বলেন, “সামগ্রিক ও জনগণ কেন্দ্রিক উন্নয়ন নীতি গ্রহণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার দারিদ্র্য ২১.৪ শতাংশে, অতি-দারিদ্র্য ১১.৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১৭৫২ মার্কিন ডলার আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে”। গত নয় বছরে বাজেট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই কোনো না কোনো ভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের সাথে সন্নিবেশিত ছিল বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “এমডিজি সফল বাস্তবায়ন বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে একীভূত করে এসডিজি’র বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিখাতের জন্য ২০১৭-২০২২ মেয়াদে ১৪.৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মেগা প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে একত্রিত করে প্রথমবারের মতো বর্তমান সরকার দেশে জাতীয় ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে। ৬.৫ মিলিয়ন বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ও প্রতিবন্ধীগণ নিয়মিতভাবে ভাতা পাচ্ছেন”।

যুব উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বিশেষ করে ২০২০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১২.৯ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আরও ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান, প্রবাসী কর্মীদের জন্য ২ মিলিয়ন চাকুরির সুযোগ সৃষ্টিসহ শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা দিক তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

বাংলাদেশে রপ্তানী খাতে ২০২০ সালের মধ্যে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি বলেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৪.৫ মিলিয়ন কর্মীর ৮৫ শতাংশই নারী যা নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

সম্প্রসারিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা, সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার এবং তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সুবিধার সম্প্রসারণ বাংলাদেশের নগর ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পদক্ষেপ ফেলেছে এবং একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প ও ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে মর্মে উল্লেখ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য হুমকি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “আমরা জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জিডিপির ১ শতাংশ ব্যয় করছি এবং মেগা প্রকল্প ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ হাতে নিয়েছি”।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ দারিদ্র্য বিমোচনকে একটি অংশীদারিত্ব ভিত্তিক দায়িত্ব উল্লেখ করে সক্ষমতা বিনির্মাণ, সম্পদ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর, তথ্য ধারণ ক্ষমতা বিনির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী দেশসমূহকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানান।

***