ফিলিস্তিন প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদ কেবল দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না -ওআইসি’র সভাপতি হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদে প্রদত্ত বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন

নিউইয়র্ক, ১৮ অক্টোবর ২০১৮ :

“ফিলিস্তিন প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদ কেবল দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না। ওআইসি সতর্ক করে দিতে চায়, এক্ষেত্রে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়” -আজ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নসহ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি’ বিষয়ক এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ওআইসির সভাপতি হিসেবে প্রদত্ত বক্তৃতায় একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

‘সম্মিলিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এই ফিলিস্তিন প্রশ্ন হতে পারে একটি লিটমাস পরীক্ষা’ একথা উল্লেখ রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “এর সমাধান আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। জাতিসংঘের রেজুলেশনসমূহ, মাদ্রিদ নীতি এবং আরব শান্তি প্রক্রিয়াসহ আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো বিচার্য্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান করতে হবে”।

স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের ঔপনিবেশিক নীতির বিষয়ে ওআইসি বার বার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছে। ইসরাইলের এই ঔপনিবেশিক আগ্রাসণ পূর্ব জেরুজালেমের জনমিতিক গঠন, অবস্থান ও চেহারা এমনভাবে পাল্টে দিয়েছে যার ফলে এই ভূখন্ড সাবলীল ফিলিস্তিনী পরিবেশ থেকে একেবারেই আলাদা হয়ে গেছে। ঠিক এমনিভাবেই অনবরত ইসরাইলী পুলিশ দ্বারা অপমানিত করা হচ্ছে পবিত্র আল আকসা মসজিদ যা সৃষ্টি করছে ভয়ঙ্কর উত্তেজনা”। তিনি আরও বলেন, “সহিংসতা ও বেসামরিক নাগরিগদের হতা-হতের ঘটনা বেদনাদায়কভাবে বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখের সামনেই হত্যা করা হচ্ছে শিশু ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদেরকে”। এহেন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে ইসরাইলী অবরোধ সরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দায়িত্বশীলতার সাথে সঙ্কটের সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

তিনি আরও বলেন, “যুগের পর যুগ কয়েক মিলিয়ন ফিলিস্তিনী শরণার্থী গৃহছাড়া; ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের রিলিফ এজেন্সী আনরওয়া’র (The United Nations Relief and Works Agency for Palestine Refugees in the Near EastUNRWA) তহবিল সঙ্কটের ফলে এই মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাস্ত্যুচ্যুত এসকল ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের নিজভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকারসহ তাদের মানবাধিকার সংরক্ষণে আনরওয়া’র তহবিল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন”। এক্ষেত্রে সকল আন্তর্জাতিক পক্ষকে এগিয়ে আসার জোর দাবী জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

ফিলিস্তিনী জনগণের ন্যায়সঙ্গত জাতীয় আকাঙ্খা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত বন্টন অনুযায়ী স্বাধীন, সার্বভৌম ও কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকল্পে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফলপ্রসূ সহযোগিতার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ চলতি মেয়াদে ওআইসির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে।

***