বাপা+৪০’ এর দ্বিতীয় দিন – এলডিসি থেকে উত্তরণ টেকসই করতে এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে কার্যকর করার আহ্বান জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।

বুয়েনস আয়ারস্, ২১ মার্চ ২০১৯:

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ারস্ এ অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের চলমান দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক ২য় উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের (বাপা+৪০) দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন প্লেনারি সেশনে সভাপতিত্ব করার পাশাপাশি তিনটি ইন্টারেক্টিভ প্যানেল আলোচনা ও একটি সাইড ইভেন্টসহ বেশ কয়েকটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন।

দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, এবং ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্র সমূহের টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া বিষয়ক সাইড ইভেন্টটির আয়োজন করে আর্জেন্টিনা, চীন, গিনি এবং জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত, ভূ-বেষ্টিত ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্র সমূহের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয় ও দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা কার্যালয়। আয়োজিত এই সাইড ইভেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলডিসি থেকে সদ্য উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনকারী দেশসমূহের উত্তরণকে টেকসই করতে এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে আরও কার্যকর করার আহ্বান জানান।

বাপা+৪০ এর প্রেরণাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আয়োজিত ইন্টারেক্টিভ প্যানেল তিনটি ছিল ১) দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার তুলনামূলক সুবিধা ও সুযোগ এবং অভিজ্ঞতা, সর্বোত্তম অনুশীলন ও সাফল্যগাঁথা বিনিময়, ২) দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার চ্যালেঞ্জসমূহ এবং এর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ, ৩) দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার আওতায় এজেন্ডা ২০৩০ এর বাস্তবায়ন এগিয়ে নেওয়া। প্যানেল আলোচনাসমূহে প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার আওতাভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে বিদ্যমান সুবিধা ও সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করে কারিগরি সহযোগিতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষির আধুনিকায়ন এবং ব্যবসা, বানিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে নিজ নিজ দেশের অর্জিত  অভিজ্ঞতা ও সর্বোত্তম অনুশীলন পারস্পরিকভাবে বিনিময় করার আহ্বান জানান। তিনি উপরিউক্ত বিষয়গুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের সাফল্যগাঁথা তুলে ধরেন। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাসমূহ ও দ্বিপাক্ষিক দাতা গোষ্ঠীর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দক্ষিণের দেশগুলোর উন্নয়ন, অর্থ, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি ফোরাম গঠন, এবং ঢাকায় ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ জ্ঞান ও উদ্ভাবনী কেন্দ্র’প্রতিষ্ঠাসহ এ জাতীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যেতে পারে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।

দক্ষিণের দেশগুলোতে এজেন্ডা ২০৩০ এর বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে উন্নয়ন সহযোগিদের প্রতিশ্রুত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং উন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তিগত জ্ঞান হস্তান্তরের পাশপাশি দক্ষিণের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন।

এছাড়া আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে একটি পৃথক বৈঠক করেন যেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন এবং এশিয়ার সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।

এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক

এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট র্কাসটি কালজুলেইড (Kersti Kaljulaid) এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত নাগরিক সেবা প্রদানের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। দু’দেশের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায় এ বৈঠকে। এছাড়া এস্তোনিয়ায় জন্মগ্রহণকারী খ্যাতনামা স্থপতি লুই আই ক্যান যিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেরও স্থপতি, তাঁর স্মরণে এস্তোনিয়া আগামী মাসে জাতিসংঘে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করছে যেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানান এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট।

আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক

আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও উপসনালয় বিষয়ক মন্ত্রী জর্জ মারসেলো ফ্যাউরি (Jorge Marcelo Faurie) এর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলপ্রসূ এ বৈঠকে ‘ফ্রেন্ডস্ অব লিবারেশন ওয়ার অনার’অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত আর্জেন্টিনার লেখিকা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো (Victoria Ocampo) ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা স্মরণ করেন। কৃষি ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের একটি অনারারি কনস্যুলেট খোলা এবং অনারারি কনসাল নিয়োগের অগ্রায়নের বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুলে ধরলে এক্ষেত্রে দ্রুত এবং পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্জেন্টিনাতে বাংলাদেশের ফুটবলারদের প্রশিক্ষণের কথা তুললে তাতে সহযোগিতা প্রদানেরও সম্মতি দেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিষয়েও আলোচনা হয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছা প্রণোদিত প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে আর্জেন্টিনা একমত পোষণ করে মর্মে জানান মারসেলো ফ্যাউরি।

তিনদিনব্যাপী এ সম্মেলন আগামীকাল শেষ হবে।

***