যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’উদযাপন – উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বে বাংলাদেশ অনুকরণীয় একটি দেশ- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মন্তব্য

নিউইয়র্ক, ২৬ মার্চ ২০১৯:

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৯ উদযাপিত হয়েছে। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে স্থায়ী মিশনে জাতীয় পতাকার আনুষ্ঠানিক উত্তোলন এবং স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়।

বিকেল ৬টায় মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বিদেশী অতিথিদের জন্য দিবসটি উপলক্ষে অভর্থ্যনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মারিয়া ফার্নান্দে এস্পিনোসা গার্সেজ (María Fernanda Espinosa Garcés), জাতিসংঘের পিস্ কিপিং ডিপার্টমেন্ট এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রুয়া Jean-Pierre Lacroix), জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে, জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত, ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি মিজ ফেকিটামোইলোয়া কাটোয়া উটইকামানু (Fekitamoeloa Katoa ‘Utoikamanu), জাতিসংঘের বৈশ্বিক যোগাযোগ বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিজ অ্যালিসন স্মেল (Alison Smale), জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, সৌদিআরব, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, বেলজিয়াম, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিউবা, আশিয়ান সদস্যভুক্ত দেশসমূহ এবং ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় শতাধিক দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি/উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ মহাসচিব আজ বাংলাদেশকে বলছেন ‘অর্থনৈতিক বিস্ময়’অথচ একসময় এই বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশের তালিকায় ফেলা হয়েছিল। এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”। রাষ্ট্রদূত দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী উদ্বৃত্ত করে বলেন, ‘ আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ্’।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘আমরা আমাদের উন্নয়ন কাজের ৯০ ভাগ নিজস্ব তহবিল থেকে করছি। আমরা শুধু এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেই বসে নেই, আমরা পরিপূর্ণভাবে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা একশত বছরের পরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা স্যাটেলাইটধারী দেশের কাতারে উঠে এসেছি। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, পারমানবিক বিদ্যুৎ -এর সবই আমাদের উন্নয়ন সক্ষমতার প্রতীক। জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আমরা বাস্তবায়ন করছি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। নিজস্ব তহবিল থেকেই এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘে আমাদের অংশগ্রহণের সকল পর্যায়ে আমরা শান্তি বিনির্মাণ, টেকসই শান্তি ও শান্তিরক্ষা, টেকসই উন্নয়ন, অভিগমন, আঞ্চলিক সহযোগিতা, জলবায়ুর বিপর্যয় রোধ, নারী উন্নয়ন, বহুপাক্ষিকতা, বহুভাষাবাদ ও বহুভাষিক সংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখেছি। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছি। আশ্রয় দিয়েছি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’পররাষ্ট্র নীতি ধারণ করে আগামী দিনগুলোতে জাতিসংঘ ও এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আমরা শান্তি-কেন্দ্রিক টেকসই উন্নয়ন বিনির্মাণে কাজ করে যাবো -এটাই আমাদের অঙ্গীকার’।

আর্থ-সামাজিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ অসামান্য অগ্রগতি সাধন করেছে মর্মে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের পিস্ কিপিং ডিপার্টমেন্ট এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রুয়া। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এসডিজি, সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তিনি বাংলাদেশের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের কথা স্মরণ করেন তিনি এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।

উপস্থিত বিদেশী অতিথিগণের সকলেই বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা ও অসামান্য সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ নিতে পারে। উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল বিশ্বে অনুকরণীয় হতে পারে বাংলাদেশ-মর্মে মন্তব্য করেন বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিগণ। তাঁরা আরও প্রত্যাশা করেন আগামী দিনে সকল চ্যালেঞ্জ সফলতার সাথে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ তার কাঙক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে।

অনুষ্ঠানটিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ ও পচাঁত্তরের পনের আগস্টের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার উপর একটি ভিডিও চিত্রও পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানটিতে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সংস্কৃতি কর্মী, দেশী-বিদেশী সাংবাদিকসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।

***