এফএফডির সাইড ইভেন্ট – বাংলাদেশে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজের প্রসারে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান।

নিউইয়র্ক, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ :

আজ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ‘উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) ফোরাম’এর চলতি অধিবেশনের সাইডলাইনে ইউএনডিপি ও ইউএনসিপিএফ আয়োজিত ‘নীতির স্পটলাইট: অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে অর্থায়নের উদ্ভাবনী কৌশল’শীর্ষক এক ইভেন্টে কী-নোট স্পীকার হিসেবে প্রদত্ত বক্তব্যে বাংলাদেশে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজের প্রসারে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। ইভেন্টটির সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, “এমএসএমই বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির অন্যতম ধারক এবং উদ্ভাবনীর চালক। এই সেক্টর দেশের অর্থনীতি বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতির আমুল পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ হওয়ার ক্ষেত্রে এই সেক্টরের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে”।

এমএসএমই এর উন্নয়নে বর্তমান সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকার এমএসএমই এর অগ্রায়নে একটি আলাদা এসএমই ফাউন্ডেশন সৃষ্টি করেছে। পুঁজি বাজারে এমএসএমই এর অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমএসএমই এর জন্য‘এজেন্ট ব্যাংকিং স্কীম’প্রবর্তন করেছে”।

তিনি বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এর সুফলের কথা তুলে ধরে বলেন, “দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করছে। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৬০ মিলিয়ন”। মোবাইল ব্যবহারকে ঘিরে বাংলাদেশে গড়ে ওঠা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর ব্যাপক বিস্তৃতি এবং সেই সাথে ব্যাংকিং, আর্থিক আদান-প্রদান ছাড়াও অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপস্ ভিত্তিক ব্যবসার ব্যাপক প্রসারের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এমএসএমই খাতে তহবিল যোগান দেওয়ার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং প্রোগ্রামের কথাও তুলে ধরেন মুখ্য সচিব।

মুখ্য সচিবের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের ডিজিটাল সেন্টার, এই সেন্টার ঘিরে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সহযোগিতা নেওয়ার কথা; সরকার কর্তৃক নারী ও তরুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার কথা।

প্যানেলের ছয়জন আলোচক বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ পদক্ষেপ, এমএসএমই এর উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ, কোলেটারেল ফ্রি লোন, মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপ এবং অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের এসকল উত্তম অনুশীলন বিশ্বের উন্নয়নকামী দেশসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে মর্মেও তাঁরা অভিমত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেওয়া ব্রিফিংএ এসকল তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরেন মুখ্য সচিব। তিনি এসময় বলেন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে। আর একারনেই আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ তাদের সভায় বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রাখছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ একই দিনে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এফএফডি’র আরেকটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেন। উন্নয়ন সহযোগিতাকে আরও কার্যকর করা বিষয়ক এই সাইড ইভেন্টটির আয়োজন করে বাংলাদেশ, জার্মানি, হন্ডুরাস, মালাওয়ি এবং বেসরকারি সংস্থা সিএসও পার্টনারশীপ ফর ডেভোলপমেন্ট ইফেক্টটিভনেস। ইআরডি সচিব প্রদত্ত বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত ‘সমগ্র সমাজ দৃষ্টিভঙ্গি’র কথা উল্লেখ করে বলেন, “বর্তমান সরকার এনজিও, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি খাত, গণমাধ্যমসহ সকল অংশীজনকে এসডিজির বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও কর্মসূচি প্রণয়নে সম্পৃক্ত করছে। আর এরফলে সমাজের সকল স্তরে সমানভাবে উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে”।

এদিকে বিকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন মিশনের সার্বিক কার্যক্রম, জাতিসংঘে বাংলাদেশ অংশগ্রহণের বিস্তারিত বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ সরকারের প্রাধিকারভুক্ত বিষয়গুলো জাতিসংঘে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মিশনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রাক্কালে সরকারি কর্মকর্তাদের করণীয় বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা নির্দেশিত বিভিন্ন পদক্ষেপ, কৌশল ও পরামর্শগুলো কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন। তিনি প্রত্যাশা করেন সামনের দিনগুলোতে বহুপাক্ষিক কূটনীতি বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করতে প্রতিটি কর্মকর্তা আরও নিবেদিত হয়ে কাজ করবেন। ‘সকলে মিলে কাজ করে আমরা সরকারের রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সক্ষম হব’মর্মেও তিনি তাঁর প্রত্যাশার কথা জানান।

উল্লেখ্য গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া এফএফডির ৪র্থ ফোরাম আগামী ১৮ এপ্রিল শেষ হবে। অনুষ্ঠানটিতে এফএফডির ৪র্থ ফোরামে যোগদানকারী বাংলাদেশ ডেলিগেশনের অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

***