প্লানেট ৫০-৫০ অর্জনের জন্য নারীর ক্ষমতায়নের পূর্ণ বাস্তবায়ন অপরিহার্য -জাতিসংঘে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

নিউইয়র্ক, ১৫ জুলাই ২০১৯ :
“বৈশ্বিকভাবে লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকল্পে গৃহীত প্লাটফর্ম ‘প্লানেট ৫০-৫০’ অর্জনের জন্য নারীর ক্ষমতায়নের পূর্ণ বাস্তবায়ন অপরিহার্য” -আজ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিজ্ মারিয়া ফার্নান্দে এসপিনোসা গার্সেজ (Maria Fernanda Espinosa Gerces) এর আহ্বানে ‘টেকসই বিশ্বের জন্য লিঙ্গসমতা ও নারী নেতৃত্ব’শিরোনামে অনুষ্ঠিত লিঙ্গসমতা বিষয়ক বৈশ্বিক নেতাদের অনানুষ্ঠানিক সভায় ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গসমতা ও একীভূত সমাজ’শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

স্পিকার তাঁর বক্তৃতায় লিঙ্গসমতা অর্জনে বিশ্বনেতাদের করণীয় সমন্ধে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “ক্ষমতা-কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের যে ক্ষমতা রয়েছে তা ব্যবহার এবং ইতোপূর্বে যে কথা বলা হয়ে ওঠেনি তা বলতে হবে। আর সে সময় এখনই। আসুন, আমাদের প্রতিশ্রুতিসমূহকে বাস্তবে রূপ দেই। আসুন, বাধা হিসেবে যে কাচের দেওয়াল রয়েছে তা ভেঙ্গে ফেলে লিঙ্গসমতা অর্জনের পথ মজবুত করি। আসুন, প্লানেট ৫০-৫০ অর্জন করি যা আজ সময়ের দাবী”।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশে লিঙ্গসমতা অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়নে গৃহীত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, অতিদরিদ্র নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টি, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের ভাতা, প্রসূতি ও দুগ্ধদানকারী নারীদের ভাতা, খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ, পেশা উন্নয়ন ও তথ্য-প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, নারী শিক্ষা উন্নয়নে ভাতা, নারীর বিরূদ্ধে সহিংসতা রোধসহ যে সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা তুলে ধরেন স্পিকার।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নারী ক্ষমতায়নের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সংসদ নেতা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা ও বিরোধীদলীয় উপনেতাও নারী। নারীদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ৫০টি আসন। আর ২৩ জন নারী সংসদ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। সামরিক বাহিনী, প্রশাসন, পুলিশ, আইন ও বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের নারীরা কাজ করছেন। দেশে ৪০ লাখেরও বেশি নারী তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করছে যা লিঙ্গসমতার উজ্জ্বল উদাহরণ”।

স্পিকার আরও বলেন, “নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের প্রথাগত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর তাহলেই লিঙ্গসমতা আনা সম্ভব”। নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে এবং নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পদক্ষেপসমূহকে আরও শক্তিকশালী করার উপর জোর দেন বাংলাদেশের স্পিকার।

সকালে সভার উদ্বোধনীতে ভাষণ দেন জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিজ্ মারিয়া ফার্নান্দে এসপিনোসা গার্সেজ, জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মিজ্ আমিনা জে. মোহাম্মদ (Ms. Amina J. Mohammed) ও ইকোসকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোনা জুল (Mona Juul)।

‘টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গসমতা ও একীভূত সমাজ’(Gender Equality and Inclusive Societies for Sustainable Development) শীর্ষক প্যানেল আলোচনার অন্যান্য প্যানেলিষ্টগণের মধ্যে ছিলেন অ্যঙ্গোলার ফার্স্ট লেডি অ্যানা আফোনসো ডায়াস লাওরেনকো (Ana Afonso Dias Lourenço), আইএলও’র মহাপরিচালক গাই রাইডার (Guy Ryder), মেক্সিকোর ভাইস ফরেন মিনিস্টার মিজ্ মার্থা ডেলগোডো (Martha Delgado)। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রুয়ান্ডার স্থায়ী প্রতিনিধি মিজ্ ভ্যালেনটাইন রূগওয়াবিজা (Valentine Rugwabiza)।

এদিকে বিকালে স্পিকার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এইচএলপিএফ এর পার্লামেন্টারি ফোরাম আয়োজিত “ক্রমবর্ধমান অসমতা ও সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা: হীন চক্র ভেঙ্গে ফেলা (Growing inequalities and distrust in government: Breaking the cycle) শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটির আলোচক হিসেবে প্রদত্ত বক্তব্যে স্পিকার বলেন “অসমতার দুষ্টচক্র ভেঙ্গে ফেলতে হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হবে। অসমতা দূর করার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের দায়বদ্ধতা রয়েছে”। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রান্তিক এলাকাসমূহের মানুষের যে সকল অসমতা রয়েছে তা দূর করার উপর জোর দেন স্পিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার গত প্রায় দু’দশক ধরে নিজস্ব রাজস্ব বাজেট থেকে অতিদারিদ্র মানুষের জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টি, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রসূতি ও দুগ্ধদানকারী নারীদের ভাতা, ভিজিএফ, দশ টাকায় ব্যাংক অ্যকাউন্ট খোলাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে যা প্রান্তিক এলাকার মানুষের অসমতা দূর করার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে এবং অতিদারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী অসমতা হ্রাস ও সরকারি ব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতা দূর করতে তিনি শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত ব্যবধান হ্রাস করার উপর জোর দেন। এসকল ক্ষেত্রে নিজ নিজ এলাকার অসমতা চিহ্নিত করে তা দূর করতে সংসদ সদস্যদেরকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান স্পিকার। পার্লামেন্টারি কমিটিসমূহেরও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন স্পিকার।

ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এর সভাপতি মিজ্ গ্যাব্রিয়েলা কুইভাস ব্যারন (Gabriela Cuevas Barron) এ সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন। অন্যান্য আলোচকগণ হলেন ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের পরিচালক পেড্রো কনসিওকাও Pedro Conceicao) এবং হাঙ্গেরির সংসদ সদস্য ড. এরসিবেত স্কমুখ (Erzsebet Schmuck)।

দিনব্যাপী এই আলোচনা অনুষ্ঠানসমূহে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।

***

Video link
https://drive.google.com/file/d/1iSoSKqshdb9rJ8VIcATVZ4bzruCScja0/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1cam32n-g77daV6PqM1gupN8e1Mg36wV3/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1vKbuQig0IKohOSIt1k9-ibSnhx79wTRA/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1izuT6WWdfbUA2cW5D5jouhM36M-kIZ2L/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1y9MJqi5tS8IbV_fwEOpnDJbhrVU97qaP/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1lAlrpIKXTIloM8MsVxX-E4vqBoFkIOoi/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1Wemuu3oCKoqwe2TksnpGl1Sk3Ohebz8t/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1k46bc7SnCwjO9batnzc30SjTbgJRLeup/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/1BkXUJeofCLvhO7wpnYQIWTOANMEbhdC9/view?usp=drive_web
https://drive.google.com/file/d/15DbbxqZn7hykQwAbqpaECnTWSoC6wk3f/view?usp=drive_web