এইচএলপিএফ এর কান্ট্রি স্টেটমেন্ট এসডিজি বাস্তবায়ন প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী

নিউইয়র্ক, ১৭ জুলাই ২০১৯:
আজ জাতিসংঘের চলতি উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম (এইচএলপিএফ) এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ কান্ট্রি স্টেটমেন্ট-এ বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এমপি। দেশ পর্যায়ের এই ভাষণে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আমরা সামগ্রিকভাবে এবং সমাজের সকলকে সাথে নিয়ে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি যাতে প্রতিটি নাগরিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারে এবং উন্নয়নের সুফল থেকে কেউ বাদ না যায়”।

মন্ত্রী আরও বলেন, “বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর হিসাব মতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। বৈশ্বিক নি¤œমুখী প্রবৃদ্ধি হার সত্ত্বেও বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ৭ ভাগের উপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে”। পরিকল্পনা মন্ত্রী বাংলাদেশের রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ এর প্রত্যাশার কথাও এই ফোরামে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের পরবর্তী উন্নয়ন পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে দুই অঙ্ক বিশিষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং আয় বৈষম্য কমাতে সর্বোচ্চ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে”।

মন্ত্রী বলেন, “টেকসই উন্নয়ন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিনির্মাণে আমরা মানসম্মত শিক্ষার উপর জোর দিয়েছি। নারী শিক্ষাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি যাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গসমতা অর্জিত হয়। সরকার নাগরিকদের উন্নত সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ স্যোসাল সিকিউরিটি কৌশল’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে”।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের শিকার বিশ্বের অন্যতম একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’সহ যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা উল্লেখ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত বৈদেশিক রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করছে এবং গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ ১৬.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে মর্মে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, তথ্য-প্রযুক্তির বিস্তার ও যুবকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনার কথাও তুলে ধরেন পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এমপি।

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এসডিজির পূর্ণ বাস্তবায়নে বিপুল পরিমান অর্থের প্রয়োজন মর্মে উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “এক্ষত্রে উন্নয়ন অংশীদার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাসমূহকে আর্থিক, কারিগরি, সক্ষমতা বিনির্মাণ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে যাতে টেকসই অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকে। আর এজন্য প্রয়োজন শক্তিশালী বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব; যা সময়ের দাবী”।

পরে পরিকল্পনা মন্ত্রী ইকোসকের সভাপতি ও জাতিসংঘের আঞ্চলিক কমিশনসমূহ (ইকোনমিক কমিশন ফর আফ্রিকা, ইকোনমিক কমিশন ফর ল্যাটিন আমেরিকা এন্ড ক্যারিবিও, ইকোনমিক এন্ড স্যোসাল কমিশন ফর এশিয়া এন্ড দ্যা প্যাসিফিক, ইকোনমিক এন্ড স্যোসাল কমিশন ফর ওয়েস্ট আফ্রিকা, ইকোনমিক কমিশন ফর ইউরোপ) এর আয়োজনে “জাতীয় টেকসই উন্নয়ন বাস্তবতায় এজেন্ডা ২০৩০ এর বাস্তবায়ন: আঞ্চলিক প্রেক্ষিতসমূহ (Translation the 2030 Agenda into national sustainable development realities: regional perspectives)” শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের মধ্যাহ্ন ভোজ সভায় যোগ দেন। তিনি অনুষ্ঠানটিতে প্রদত্ত বক্তব্যে দেশ পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের আঞ্চলিক এজেন্সিসমূহের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ইকোনমিক এন্ড স্যোসাল কমিশন ফর এশিয়া এন্ড দ্যা প্যাসিফিক (এসকাপের) এর ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।

আগামীকাল উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম (এইচএলপিএফ) এর শেষ দিনে মন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য সৃষ্ট এইচএলপিএফ মেকানিজমের কার্যকারিতা এবং ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত এইচএলপিএফ এর মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো কীভাবে উপকৃত হয়েছে সে বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরবেন এবং এই মেকানিজম কিভাবে কার্যকর করা যায় সে বিষয়েও মতামত প্রদান করবেন।

বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রীর সাথে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র বাণিজ্য মন্ত্রীর দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক

আজ সকালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এমপি এর সাথে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রী পিটার সিজিজার্তো (Peter Szijjarto) এর দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক উঠে আসে এই বৈঠকে।

দু’দেশের যৌথ পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে হাঙ্গেরি সহযোগিতা করতে পারে মর্মে মত প্রকাশ করেন হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রী। পরিকল্পনা মন্ত্রী এতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। তিনি আলোচনায় বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির উপর জোর দেন। এছাড়া দু’দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন পিটার সিজিজার্তো। তিনি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিতব্য ‘বুদাপেস্ট ডেমোগ্রাফিক সামিট’-এ বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এ বিষয়ে দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করবেন মর্মে আশ্বস্থ করেন।

***

Video link

https://drive.google.com/file/d/1Wivuby-Uteo2xlxXqSMPPkGfwux2WaIn/view?usp=drive_web