এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য আনন্দমূখর পরিবেশে উদযাপিত হল নিউইয়র্কে – আলোচনায় উঠে আসলো বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার উপাখ্যান

নিউইয়র্ক, ২২ মার্চ ২০১৮:

নিউইয়র্কে আজ জাতীয় উদযাপনের সাথে মিল রেখে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য আনন্দমূখর পরিবেশে উদযাপন করা হল। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী, আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথি এবং স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্কের যৌথ আয়োজনে এই আনন্দঘন মূহুর্ত উদযাপন করা হয়।

কনস্যুলেট জেনারেল মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের দু’টি ইভেন্টে যোগদান উপলক্ষে নিউইয়র্ক সফররত বাংলাদেশের দু’টি পৃথক ডেলিগেশনের প্রধান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম এমপি এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এমপি। আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘কমিটি ফর ডেভোলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)’ এর সিনিয়র ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার ম্যাথিয়াস ব্রুকনার; জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি), ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত দেশ (এলএলডিসি) ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ (সিডস্) সংক্রান্ত কার্যালয়ের পরিচালক মিজ্ হেইডি ফক্স, জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিলের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জেভিয়ার মিসিয়ন।

উদযাপন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান এনডিসি। আনন্দঘন এই মূহুর্ত উদযাপনে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমায় এটি একটি মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার সমাজের সকলকে সাথে নিয়ে অগ্রমূখী যে উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, এই অর্জন তারই প্রতিফলন”।

একে এক মঞ্চে আসেন আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথি ম্যাথিয়াস ব্রুকনার, হেইডি ফক্স ও জেভিয়ার মিসিয়ন। বিদেশী অতিথিগণ তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন।

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি), ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত দেশ (এলএলডিসি) ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ (সিডস্) সংক্রান্ত কার্যালয়ের পরিচালক মিজ্ হেইডি ফক্স বলেন, “এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দ বোধ করছি। এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তিনটি ক্যাটাগরিতেই বিপুল মার্জিন নিয়ে উর্ত্তীর্ণ হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত খাতসহ বিভিন্ন খাতে অসামান্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রতিঘাত ও প্রতিকুলতা মোকাবিলা করে এ যেন ঘুরে দাঁড়ানোর এক সাফল্যগাঁথা”।

জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিলের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জেভিয়ার মিসিয়ন বলেন, “বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে এলডিসিতে যোগ দিয়েছিল। সেই দিন আর আজকের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান। এই দেশটি সত্যিকারভাবে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে। যা বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতার মধ্যে দৃশ্যমান”।

আমন্ত্রিত সকল বিদেশী বক্তাই উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ সফলতার সাথে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ উন্নয়নকে টেকসই ও স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হবে মর্মে আশা প্রকাশ করেন। এক্ষত্রে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি এ অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আরও ২০ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতো। আজ এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম এমপি এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এমপি তাঁদের বক্তৃতার শুরুতেই বাংলাদেশের এই অসমান্য অর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম বলেন, “যুদ্ধ বিধ্বস্ত সেই বাংলাদেশ হতে আজকের এই এলডিসি ক্যাটাগরি উত্তরণ -যার জন্য বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু চড়াই উৎরাই। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহসী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আর অর্জনের এই উপাখ্যানে মিশে আছে উন্নত ভবিষ্যত ও সমৃদ্ধি অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অদম্য স্পৃহা যার পরতে পরতে রয়েছে জাতির পিতার প্রদর্শিত পথ এবং তাঁরই স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়”।

প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম এমডিজি অর্জন ও এসডিজি বাস্তবায়নসহ উন্নয়নের প্রতিটি সেক্টরে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের এই অবস্থানে আসার পিছনে প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের অবদানের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের এই উত্তরণকে টেকসই করতে প্রবাসীগণ স্ব স্ব অবস্থানে থেকে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবেন মর্মে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

নিষ্ঠুরভাবে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যহত ও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল মর্মে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এমপি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন। জাতির পিতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূণ্য বাংলাদেশের হাল ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত করেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ।

এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের এই উত্তরণে দেশের নারীদের অসামাণ্য ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, “এই অর্জনের অভ্যন্তরের কাহিনীতে রয়েছে বাংলাদেশের নারীরা, এবং অবশ্যই তারা আগামীদিনের অর্জনেও মূল দৃশ্যপটে সামনে থাকবে”।

বাংলাদেশের জনগণ আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে মর্মে উভয় প্রতিমন্ত্রী তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রীদ্বয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহের কথা তুলে ধরেন। উঠে আসে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, গ্রামীণ উন্নয়ন, অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি, যুব উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন ও বৈদেশিক সম্পর্কসহ উন্নয়নের বিভিন্ন খাতের সাফল্যের কথা।

প্রতিমন্ত্রীদ্বয় বলেন, সকলকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ সরকার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স- এ জানুয়ারি ২০১৮ এর তালিকায় বাংলাদেশ ৩৪তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থান। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রীদ্বয়।

অনুষ্ঠানটিতে কাজী রোজী এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফয়জুর রহমান চৌধুরী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব কাজী মাফরূহা সুলতানাসহ চলতি সিএসডব্লিউ’র ৬২তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ ডেলিগেশনের অন্যান্য সদসগণ উপস্থিত ছিলেন।

***