রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে কনসার্ট

নিউইয়র্ক, ২৫ জুন ২০১৮:

আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যে ৭টায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে ম্যানহাটানস্থ বারুক পারফর্মিং আর্টস্ সেন্টারে (Baruch Performing Arts Centre) কনসার্টের আয়োজন করে জাতিসংঘের স্টাফ রিক্রিয়েশন কাউন্সিলের ‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’(UN Chamber Music Society)। কনসার্টটিতে সহযোগিতা প্রদান করে বেসরকারি পারফর্মিং আর্টস্ গ্রপ ‘ব্রুকলীন রাগা ম্যাসিভ’ Brooklyn Raga Massive)।

মানবতার জন্য আয়োজিত এই কনসার্ট উপলক্ষে দেওয়া জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের বাণী পাঠ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এন্ড্রু গিলমোর (Andrew Gilmour)। জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর বাণীতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশ উদারতার কথা উল্লেখ করেন এবং রোহিঙ্গাদের সাহার্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য এ জাতীয় কনসার্টের আয়োজনকে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানটিতে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের এই মানবিক সঙ্কট আমাদেরকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সঙ্কটের মাত্রা এতটাই ব্যাপক যে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সঙ্কটে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এই মানবিক সঙ্কটে আমাদের সরকার ও জনগণের পক্ষে যা করা সম্ভব আমরা তার সবটুকুই করছি”। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “শুধু মানবিক সহযোগিতাই নয়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে দ্রুততম সময়ে নিজভূমিতে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে আমরা আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি”। জাতিসংঘ মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টিকে দেখছেন বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। মহাসচিবের আশু বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

নিউইয়র্কের জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (UNHCR) অফিসের পরিচালক মিজ্ নিনিতি কেলী (Ninette Kelly) তাঁর বক্তব্যে একসাথে বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের মতো ভয়াবাহ পরিস্থিতি এবং তাদের মানবিক বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান। এ ধরণের কনসার্টের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সাহার্যার্থে মেধাবীদের এগিয়ে আসার উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন মিজ্ কেলী।

অনুষ্ঠানটিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পর্ব শেষে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর শুরু হয় মুল আয়োজন, কনসার্ট। পিয়ানো, ভায়োলিন ও তবলাসহ মধ্যযুগীয় বাদ্যযন্ত্র হারপিস্ট (Medieval Harpist) এর সূর-মূর্ছনায় মূখরিত হয় গোটা অডিটোরিয়াম। একে একে পরিবেশিত হয় ৯টি মিউজিক্যাল আইটেম। ‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’র শিল্পীদের পরিবেশিত কন্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের পাশাপাশি স্থান পায় তবলাকে প্রাধান্য দিয়ে ‘আমারও পরানও যাহা চায়’এই রবীন্দ্র সঙ্গীতের মিউজিক্যালটি। তবলায় সুর তোলেন ‘ব্রুকলীন রাগা ম্যাসিভ’এর বিশিষ্ট শিল্পী প্রবাসী বাংলাদেশী মীর নকিবুল ইসলাম। ‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’র শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আরিয়েল হরোইটিস্ (Ariel Horowitz), জোনা উ (Johnna Wu), ফ্লোরি মার্শাল (Florrie marshall), মেইয়ানা জিয়াং (Meyanna Jiang), ক্রেইগ কেলোনোস্কি (Craig Klonowski), ব্রেন্দা ভনগোভা (Brenda Vongova) ও ডেভিড ইয়ার্ডলী (David Yardley)। গোটা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’র আর্টিস্টিক ডাইরেক্টর মিজ্ ব্রেন্দা ভনগোভা।

এই কনসার্ট থেকে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ‘ব্রাক’এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহার্যার্থে প্রদান করা হবে।

অনুষ্ঠানটিতে বিপুল সংখ্যক সঙ্গীত পিপাসু দর্শক-শ্রোতার পাশাপাশি জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

***