জাতিসংঘ সদস্যদেশসমূহের ‘কাউন্টার টেরোরিজম’বিভাগের প্রধানদের সম্মেলন- সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থা দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’নীতির কথা তুলে ধরলেন অতিরিক্ত আইজিপি মো: শফিকুল ইসলাম

নিউইয়র্ক, ২৯ জুন ২০১৮:

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থা’দমনে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দল উদ্বুদ্ধ সন্ত্রাস সহ সবধরণের সন্ত্রাস প্রতিরোধও দমনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে” – জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হওয়া সদস্যদেশসমূহের ‘কাউন্টার টেরোরেজম’বিভাগের প্রধানদের দু’দিন ব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনে (২৮ জুন) প্রদত্ত বক্তব্যে একথা বলেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো: শফিকুল ইসলাম। উল্লেখ্য তিনি এ সম্মেলনে তিন সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা ও তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সমর্থ হয়েছে। তিনি এক্ষেত্রে সন্ত্রাসের শিকড় উৎপাটন করা এবং যে সকল কারণে সন্ত্রাস সৃষ্টি হচ্ছে তা নির্মূল করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার যে সকল অনুঘটক রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমরা ‘সমাজের সকলকে নিয়ে (Whole-of-Society Approach) কাজ করার দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করছি। এক্ষেত্রে আমাদের কমিউনিটি পুলিশিং পদক্ষেপটি খুব কাজে লাগছে। সহিংস চরমপন্থা দমনে বাংলাদেশের নারী ও যুব উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোও দারুনভাবে প্রভাব ফেলছে।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের কোন সন্ত্রাসী গ্রুপকে বাংলাদেশের মাটিতে স্থান না দেওয়ার বিষয়ে তিনি সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাতে কোন সন্ত্রাসী উপাদানের সৃষ্টি হতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম সংস্থাসমূহের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। এছাড়া আমাদের ভূখন্ডে বিদেশী কোনো সন্ত্রাসীর সন্দেহজনক গতিবিধির বিষয়ে আমরা সদা তৎপর। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।

সন্ত্রাসী এবং বহুজাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধ (Transnationl organized crime) চক্রের মধ্যকার অব্যাহত সম্পর্কের বিষয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে জনাব মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, “সন্ত্রাস অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের সংস্থাসমূহ সবসময়ই তাদের দক্ষতা আরও বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে”।

অতিরিক্ত আইজিপি আরও বলেন, “কৌশলগত যোগাযোগকে আরও উন্নত করতে আমরা জাতিসংঘের কাউন্টার টেরোরিজম সেন্টারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। অনলাইনের সন্ত্রাসী উপাদানগুলো ট্রাক করতে আমাদের সংস্থাসমূহ তাদের সক্ষমতা বির্নিমাণে সচেষ্ট রয়েছে”। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাস দমন কৌশল বাস্তবায়নে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের সন্ত্রাস দমন এজেন্সীসমূহ সদা প্রস্তুত রয়েছে মর্মে জানান জনাব মো: শফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ পুলিশ গতবছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমুহে সন্ত্রাস দমন বিষয়ে এ অঞ্চলের পুলিশ প্রধানদের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি সম্মেলন আয়োজন করেছিল মর্মে জানান অতিরিক্ত আইজিপি। তিনি আগামীতেও এধরণের সম্মেলন আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।

দু’দিন ব্যাপী আয়োজিত এই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে ‘কাউন্টার টেরোরিজম’বিষয়ে হাই লেভেল সেশন ছাড়াও চারটি সেশনের আয়োজন করা হয়। উচ্চ পর্যায়ের সেশনে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘের কাউন্টার টেরোরিজম অফিসের প্রধান, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ভ্লাদিমির ভরণকোভ (Vladimir Voronkov)। সমাপনী বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। দু’দিন ব্যাপী এই সম্মেলন উপলক্ষে ২৫টিরও বেশি সাইড ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্য দু’জন সদস্য হলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জয়েন্ট পুলিশ কমিশনার মো: আমিনুল ইসলাম এবং র‌্যাব প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো: মাহবুব আলম।

***