জাতিসংঘের হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম ডেটা বিপ্লব ও পয়:নিষ্কাশন বিষয়ক বাংলাদেশের সাইড ইভেন্ট দু’টিতে সদস্য দেশগুলোর ব্যাপক সাড়া

নিউইয়র্ক, ১২ জুলাই ২০১৮:

গত ৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া জাতিসংঘের হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম (এইচএলপিএফ)-এ অংশগ্রহণের এ পর্যায়ে আজ বাংলাদেশ ডেটা বিপ্লব ও পয়:নিষ্কাশন বিষয়ক দু’টি সাইড ইভেন্টের আয়োজন করে। ‘ডেটা বিপ্লবে পিছনে পড়ে থাকবে না কেউই Leaving No One Behind Through Data Revolution)’ এবং ‘পয়:নিষ্কাশনে অংশগ্রহণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলাদেশ থেকে শেখা (Participatory Approaches to Sanitation: Learning from Bangladesh)’ শিরোনামে আয়োজিত সাইড ইভেন্ট দুটিতে যোগ দেন জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রসমূহ, থিংঙ্ক ট্যাংক, নীতি নির্ধারক, বিষয় বিশেষজ্ঞ ও গবেষকসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিগণ। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন পয়:নিষ্কাশন বিষয়ক সাইড ইভেন্টটিতে উদ্বোধন ও সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন যথাক্রমে ডেটা বিপ্লব ও পয়:নিষ্কাশন সংক্রান্ত সাইড ইভেন্ট দু’টির মডারেটর ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অনান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস ড. ফিরোজ আহমেদ, ঢাকা ওয়াসা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো: রাশিদুল হক।

‘পয়:নিষ্কাশনে অংশগ্রহণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলাদেশ থেকে শেখা’বিষয়ক সাইড ইভেন্টে বক্তৃতা প্রদানকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন কমিউনিটি ভিত্তিক পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা (Community Led Total Sanitation) বিষয়ে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “কমিউনিটি ভিত্তিক পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ফলে উন্মুক্ত স্থানে পয়:নিষ্কাশনের হার মাত্র ১ শতাংশে নেমে এসেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে সরকারের ব্যাপক প্রচারণা ও পদক্ষেপের ফলে। দেশে ৮৮% মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছে”। এসডিজি-৬ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে মর্মে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় প্রদান করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা তা করতে পেরেছি”। এমন একটি ইভেন্টের সহ-আয়োজক হওয়ার জন্য তিনি জাতিসংঘের ইনস্টিটিউট ফর ট্রেনিং এন্ড রিসার্চ (UNITAR) কে ধন্যবাদ জানান।

ইউনিটারের এক্সিকিউটিভ এডিটর নিখিল শেঠ (Nikhil Seth) বলেন, “এমডিজির সফল বাস্তবায়ন শেষে এসডিজি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ শুধু তার সফল্যের কাহিনীগুলোই তুলে ধরেনি, ২০২১ সালে বাংলাদেশ দেখতে কেমন হবে তা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে এর রূপকল্প বাস্তবায়নের ক্রমধারা দেখে। খুব কম দেশই এত অল্প সময়ে তার জনগণের জন্য এমন সাফল্য রচনা করতে পেরেছে”।

পয়:নিষ্কাশন বিষয়ক সাইড ইভেন্টটি পাঁচটি মডিউলে ভাগ করে আলোচনা করা হয়। মডিউলগুলো ছিল:          ১) বাংলাদেশে এসডিজি’র সার্বিক সমন্বয়, ২) বাংলাদেশের স্যানিটেশনের সার্বিক দৃশ্যপট, ৩) নগর এলাকায় স্যানিটেশন: বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ ও সর্বোত্তম অনুশীলন, ৪) গ্রামীণ এলাকার স্যানিটেশন চিত্র: বাংলাদেশ থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ এবং ৫) ফিডব্যাক। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও ব্যবহার, স্যানিটেশন ক্যাম্পেইন, স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, এলাকা ভিত্তিক কেস স্টাডি ও গণসচেতনতার উপর কার্টুন (মিনা কার্টুন), লোকজ গানের ভিডিও চিত্র প্রদর্শণ এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি অংশগ্রহণকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। ফিডব্যাক ও প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় সানিটেশন সংক্রান্ত বৈশ্বিক উন্নয়নে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে মর্মে অংশগ্রহণকারী জাতিসংঘ ও  এর সদস্যদেশসমূহের প্রতিনিধিগণ মন্তব্য করেন।

“উপাত্ত বিপ্লবে পিছনে পড়ে থাকবে না কেউই (Leaving No One Behind Through Data Revolution)” শীর্ষক সাইড ইভেন্টটি আয়োজন করা হয় টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ এর মুল মন্ত্র “কেউ পিছনে পড়ে থাকবে না”-কে ধারণ করে। ডেটা বিপ্লবের মাধ্যমে টেকসই ও সুসম উন্নয়ন বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানানো হয় এই সাইড ইভেন্টটিতে।

বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ডেটা রেভ্যূলেশনের মাধ্যমে এজেন্ডা ২০৩০ এর মূল মন্ত্র বাস্তবায়নার্থে কার্যকর ও গতিশীল উন্নয়ন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে আমাদেরকে অবশ্যই পাঁচটি ক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটাতে হবে । তা হলো: ১) ডেটা গ্যাপ থেকে ডেটা জেনারেশন, ২) অ্যানালগ ডেটা থেকে ডিজিটাল ডেটা, ৩) অসমন্বিত ডেটা থেকে ডেটা সমন্বয়করণ, ৪) প্রাথমিক ডেটা থেকে নীতি নির্ধারকদের জন্য কার্যকর ডেটা এবং ৫) বৃহৎ ডেটা সমূহের সুযোগ গ্রহণ। সঠিক ডেটা সরবরাহ ও নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশেসমূহের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি করা যায় মর্মেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “এজেন্ডা ২০৩০ যথার্থই সামগ্রিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও এসডিজি’র সকল প্রপঞ্চসমূহের বাস্তবায়নার্থে ডেটাকে একটি টুলস্ হিসাবে নির্ধারণ করেছে। মানসম্মত ও সুবিন্যস্ত ডেটা ব্যাতিত কার্যকর নীতি প্রণয়ন ও সম্পদ বন্টন সম্ভব নয়, একারনেই ডেটা বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য”।

সাইড ইভেন্টটিতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের ইকোনমিক ও স্যোসাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক স্টীফান স্কীউইনফেস্ট (Stefan Schweinfest), ইউএনডিপির উপ-পরিচালক ডগলাস কীহ্ (Douglas Keh), নরওয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভাইজর মিজ্ লাইভ মারগ্রেথ রগনিরুড (Margrethe Rognerud), উইএন গ্লোবাল পালস্ এর পরিচালক রবার্ট ক্রিকপ্যাট্রিক (Robert Kirkpatrick), এয়ারবিএনবি’র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান মিজ্ থাও নাগুয়েন (Thao Nguyen), বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ওমর সিরাজউদ্দিন, এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী।

বক্তাগণ এসডিজি’র প্রকৃত বাস্তবায়নে ডেটার যথাযথ ব্যবহার, ডেটা প্রাপ্তি ও প্রবেশে বৈষম্য হ্রাসসহ এর বহুমূখী ব্যবহারের উপর আলোকপাত করেন। আলোচনায় উঠে আসে সমাজের দরিদ্র্য ও অরক্ষিত মানুষের সামাজিক বৈষম্য হ্রাস এবং তাদেরকে উন্নয়নের মূল ¯ স্রোতে আনতে পরিবেশগত, ভৌগোলিক, লিঙ্গসংক্রান্ত ও সাংস্কৃতিক উপাদান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরণের ডেটার অপ্রতুলতা, অসামঞ্জস্যতা ও সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। বক্তাগণ বলেন এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে ডেটা বিপ্লবের কোন বিকল্প নাই। তাঁরা উন্নয়নশীল দেশসমূহে উপাত্ত ব্যবহারের বৈষম্য কমিয়ে আনা ও সুযোগের সমতা বিধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

***