‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’বিনির্মাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জনগণের জীবন-মানে গুণগত পরিবর্তন এনেছে শেখ হাসিনা সরকার -জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন

নিউইয়র্ক, ১৯ অক্টোবর ২০১৮ :

“জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ -এটিই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও ৭৩তম অধিবেশনে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে প্রতিফলিত হয়েছে। গত ১০ বছরে শেখ হাসিনা সরকার তার নিবেদিত প্রচেষ্টায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জনগণের জীবন-মানে গুণগত পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে এখন আইসিটি একটি কার্যকর বাহন” -আজ জাতিসংঘের চলতি ৭৩তম অধিবেশনের দ্বিতীয় কমিটিতে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ে প্রদত্ত বক্তব্যে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

দেশব্যাপী তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “এর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। অনলাইনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক জনসেবার ব্যাপক প্রসারের ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। দূর্নীতি ও অনিয়ম ব্যাপভাবে হ্রাস পেয়েছে আর সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে”।

স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, “আমরা ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আইসিটিকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছি বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। আমরা ইন্টারনেট ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি যাতে নারী ও প্রান্তিক এলাকার জনগণ তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহজভাবে এর ব্যবহার করতে পারে এবং অসমতা হ্রাস পায়। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক সেবা এক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে। ব্লু-ইকোনমি’র প্রসারে কীভাবে তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি”।

আইসিটি পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে সফট্ওয়ার নির্মাণ সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য সরকার তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে মর্মে জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি বলেন, “শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার সামর্থ্য অর্জন বা দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রেই নয়, সবুজ প্রবৃদ্ধি ও কার্বনমুক্ত শিল্পায়নের প্রসারেও আমরা আইসিটি ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের মাধ্যমে মহাশুণ্যের জগতে বাংলাদেশের বিচরণের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা, এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ঝুঁকি ও প্রতিকূলতা মোকাবিলার সামর্থ্য অর্জনে জনগণকে আমরা আরও সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারবো”।

তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে মর্মে উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রায়শ:ই সাইবার আক্রমনের শিকার হচ্ছে। উন্মুক্ত সাইবার জগতের এসকল ঝুঁকি ও হুমকি আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের এই কষ্টার্জিত অর্জনকেও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলতে পারে মর্মে উদ্বেগের কথা জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ‘পূর্ণাঙ্গ সাইবার নিরাপত্তা ইকো-সিস্টেম’প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ৭৩তম সাধারণ পরিষদের হাই-লেভেল সপ্তাহে বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা’বিষয়ক সাইড ইভেন্টে প্রদত্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করার কথাও উল্লেখ করেছেন”।

তিনি বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের স্বাক্ষী হতে যাচ্ছি। বিশ্বের দেশসমূহের মাঝে বিদ্যমান তথ্য-প্রযুক্তিগত ব্যাপক ব্যবধান এই শিল্প বিপ্লবে অসমতা সৃষ্টি করতে পারে। এ সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রযুক্তিগত ব্যবধান হ্রাস, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে আইসিটির ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশসমূহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

***