জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫-তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সপ্তাহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

নিউইয়র্ক, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০:

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে জাতিসংঘের ইতিহাসে এবারই প্রথম ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ পরিষদ অধিবেশন। অধিবেশনটির উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্বটি শুরু হবে ২২ সেপ্টেম্বর। নিজ নিজ দেশ থেকে সদস্যরাষ্ট্রসমূহের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে এবারের সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সপ্তাহসহ অন্যান্য ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। এতে পূর্বধারণকৃত ভিডিও বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও বেশ কিছু সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

এবারের সাধারণ বিতর্কের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছেঃ “The future we want, the United Nations we need: reaffirming our collective commitment to multilateralism – confronting COVID-19 through effective multilateral action”। মূলত, ২০২০ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি ও মহামারী কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবকে উপজীব্য করে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অধিবেশন যেমন বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রাসঙ্গিকতাকে সামনে নিয়ে আসবে তেমনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আগামী বছরগুলোতে কি ধরনের জাতিসংঘ দেখতে চান সে বিষয়ে তাঁদের অভিমত, চিন্তাধারা ও পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।

এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায় রাষ্ট্রসমূহের উদ্যোগ, কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট অসমতা ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়সহ নানবিধ সমস্যা মোকাবেলা এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়সমূহ নিয়ে এবারের অধিবেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। মহামারী প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করার কারণে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন প্রচেষ্টা যাতে ব্যাহত না হয় এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধ যাতে সমান গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয় সেই বিষয়টিও এবারের অধিবেশনে উঠে আসবে।

প্রতিবারের মত এবারও জাতিসংঘের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আইসিজেতে চলমান মামলা এবং আইসিসিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা গুরুত্বসহকারে আলোচিত হবে।

এ বছর, ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত World Conference on Women -এর ২৫ বছর পূর্তি। এ প্রেক্ষিতে এবারের অধিবেশনে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মত বিষয়সমূহ ব্যাপকভাবে আলোচিত হবে।

সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ:

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দিবেন। এই ভাষণে স্বাভাবিকভাবেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্ববাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার আবশ্যকতা, ভ্যাক্সিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ, এবং জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত ও দুর্দশা দমনে আমাদের গৃহীত কার্যক্রম প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি, জলবায়ূ পরিবর্তন, প্রযুক্তির আদান প্রদান, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ, লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ, শিশু স্বাস্থ্য ও তাদের অধিকার, শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ, এবং নারীর ক্ষমতায়নের মত বিষয়সমূহ উঠে আসবে। তাছাড়া, প্রতিবারের মত রোহিঙ্গা সমস্যা ও তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রাধান্য পাবে।

সাধারন বিতর্ক পর্বের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সব গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন সেগুলো হলোঃ

এক. ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে জাতিসংঘের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিতব্য “High Level Event to Mark the 75th Anniversary of United Nations” শীর্ষক সভা। এই অনুষ্ঠানটির মধ্য দিয়েই এবারের অধিবেশনের ঐরময খবাবষ পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। কোভিড মহামারীর প্রেক্ষাপটে এই সভার মূল প্রতিপাদ্য “The future we want, the United Nations we need: reaffirming our collective commitment to multilateralism” যা এবারের সাধারণ বিতর্কপর্বসহ সকল সভার আলোচ্য বিষয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

দুই. ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত “High-level Dialogue on “Digital Cooperation: Action Today for Future Generations”  শীর্ষক সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন। এই সভায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবী নিশ্চিতকরণে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

তিন. জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য “High Level Roundtable on Climate Action”  শীর্ষক সভা। এ সভায় অংশগ্রহণ করে Climate Vulnerable Forum (CVF)-এর সভাপতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত তহবিল প্রদান, জলবায়ু শরণার্থীদের পুনর্বাসনের মত বিষয়সমূহ তুলে ধরবেন।

চার. ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে “High-level event on Financing for Development (FFD) in the era of COVID-19 and beyond” শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোভিড-১৯ এরক্ষতিকর প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, সরকারি অর্থের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অর্থায়ন, নর্থ সাউথ ট্রায়াঙ্গুলারকো-অপারেশন এবং অভিবাসী ও রেমিট্যান্স বিষয়ে জোরালো দাবী উত্থাপন করবেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এফএফডি সংক্রান্ত আলোচক দলের সহ-নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশ হিসেবে উপরিউক্ত এসকল বিষয়গুলো বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছে।

পাঁচ. ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে “Summit on Biodiversity” শীর্ষক সভা। উক্ত সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীব বৈচিত্র্যের হুমকির কারণসমূহ এবং এ হুমকি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাবেন। এছাড়া, তিনি জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত কার্যাবলী উল্লেখ করবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের মাধ্যমে জীব বৈচিত্র্য রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করবেন।

ছয়. ০১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে “High-level meeting to mark the 25th anniversary of the Fourth World Conference on Women and the adoption of the Beijing Declaration and Platform for action (Beijing +25)” শীর্ষক সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন। এই সভার মুল প্রতিপাদ্য হলোঃ ‘Accelerating the realization of gender equality and the empowerment of all women and girls’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে আমাদের অভাবনীয় সাফল্যের বিষয়টি এই সভায় তুলে ধরবেন। একইসাথে এ বিষয়ে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অংশীদারিত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করবেন।

এছাড়া, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী “High-level plenary meeting to commemorate and promote the International Day for the Total Elimination of Nuclear Weapons” শীর্ষক সভাসহ কয়েকটি সভায় অংশগ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশসমূহের মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কয়েকটি সভায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

***