জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ বিষয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সংবাদ সম্মেলন

নিউইয়র্ক, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ :

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,

আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

আপনারা জানেন যে, আগামী ২৩-২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক আসছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে তিনি ৯০ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।

এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য বা ঞযবসব হচ্ছে “Making the United Nations relevant to all people: global leadership and shared responsibilities for peaceful, equitable and sustainable societies”। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি জাতিসংঘকে মানুষের ভবিষ্যৎ আশা আকাক্সক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এবারের এই প্রতিপাদ্য জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের সেই অভিষ্ট লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এবারের অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মূলত: যে সব বিষয়ে অংশ নিচ্ছেন, সেগুলো সংক্ষেপে নি¤েœ তুলে ধরা হল:

ক. রোহিঙ্গা বিষয়ক

খ. উন্নয়ন বিষয়ক, বিশেষত: শিক্ষা ও নারী অধিকার

গ. আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা

ঘ. জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এবারের অধিবেশনে গতবারের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সারা বছরই আপনাদেরকে হাল নাগাদ রেখেছি। জাতিসংঘে এ বিষয়ে যখনই যা হয়েছে আপনাদের তা জানিয়েছি। রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যা দৃশ্যমান। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবো।

এছাড়া আরও একাধিক কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। আমি সে বিষয়গুলোর নিরীখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ অধিবেশনে অংশগ্রহণের সম্ভাব্য কর্মসূচি সম্পর্কে আলোকপাত করবো।

১। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌছাবেন ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে। এইদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন তিনি।

২। পরের দিন অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে লেনসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকালে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দিবেন। ইভেন্টটির আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ২৯টি দেশের সাথে বাংলাদেশ এর সহ-আয়োজক। উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব।

একই দিনে শরণার্থী রিষয়ক বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট ও শিক্ষা বিষয়ক দুটি উচ্চ পর্যায়ের হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ নিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন।

৩। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য রাখবেন। এতে জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও সিঙ্গাপুর কো-স্পনসর করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। পিস কিপিং বিষয়ক এই ইভেন্টে প্রদেয় বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত একটি প্যানেলে যোগ দিবেন।

৪। জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী।

৫। আমরা আশা করছি ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানপ্রন্ত্রী সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দিবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দিবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতবারের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশমালার ধারাবাহিকতায় এবারেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন। তাঁর বক্তব্যে থাকবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথার বিষয়গুলো। ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার যে ইতোমধ্যে কার্যμম শুরু করেছে, সে বিষয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলোও তাঁর বক্তৃতায় থাকবে বলে আমরা আশা করছি।

এর আগে লিথুনিয়ার রাষ্ট্রপতি আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণ দিবেন। শিক্ষা ও নারী অধিকার বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টগুলোতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীর শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ তুলে ধরবেন। এসকল ইভেন্টগুলোতে উপস্থিত থাকবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন।

৬। ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মিলনায়তনে এই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

৭। এর পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র/ সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।

৮। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি রিসেপশন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

৯। এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন।

১০। বরাবরের মতোই কিছু স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবে। সামগ্রিকভাবে, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ বৈশ্বিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তিকে আরও সুসংহত করবে। একই সাথে, জাতিসংঘের হাত ধরে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের বহুমুখী সফলতা ও অবদানের কথা তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

১১। এছাড়া মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব মহোদয়ের আলাদা আলাদা কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়া যক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের দুটি ইভেন্টে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবে।

আপনারা জানেন সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশন উপলক্ষে অসংখ্য সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এ সকল সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের তাৎপর্যপূর্ণ অংশগ্রহণ থাকবে বলে আমরা আশা করছি।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

***