জলবায়ু পরিবর্তন রোধের নিরলস যোদ্ধা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ -জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন

নিউইয়র্ক, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯:

“জলবায়ু পরিবর্তন রোধের নিরলস যোদ্ধা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ” -আজ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট দুর্যোগসমূহের প্রভাব মোকাবিলা’বিষয়ক এক উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য প্রদানকালে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ‘কার্বন বাজেটিং’, ‘কার্বন বিহীন উৎপাদন পথ’ এবং ‘নিম্ন-কার্বন শিল্পায়ন’এর মতো বিশেষ পরিকল্পনাসহ জলবায়ু ও দুর্যোগ সৃষ্ট বহুমাত্রিক ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে সম্প্রতি যুগান্তকারী ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’গ্রহণ করেছে যা পরবর্তী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়নে আমাদেরকে পথ দেখাবে”।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলে জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পদক্ষেপ সন্নিবেশিত করেছি। জিডিপি’র একভাগেরও বেশি আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের কৃষি খাতকে জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষিখাতে রূপান্তরিত করছি। সারাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদ্দন শতকরা ২২ থেকে ২৪ ভাগে উন্নীত করার পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। ইউনেস্কোর ঐতিহ্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি ‘সুন্দরবন’এর সংরক্ষণে আমরা ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি”।

স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “নানা চ্যাঞ্জেল সত্ত্বেও ‘পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নয়ন’, ‘অবাধ তথ্য সরবরাহ’, ‘প্রয়োজনীয় ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ’এবং ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলা প্রস্তুতি ও সাড়াদান কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবীদের সক্রিয় ও নিবেদিত অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশ দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে পেরেছে যা সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের জাতীয় সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে”।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুকি হ্রাস বন্ধ করতে হলে আমাদেরকে এজেন্ডা ২০৩০ এবং প্যারিস চুক্তি ও সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক সত্যিকারভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বৃহৎ কার্বন উদগীরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই দ্রুততার সাথে গ্রীণ হাইজ গ্যাস উদগীরণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে”।

স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে সকল স্থানে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি হতে পারে তা চিহ্নিত করে এর সমাধান ও প্রতিরোধে সমগ্র জাতিসংঘ ব্যবস্থাপনাকে একসাথে এবং সমস্বরে কাজ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে আর্থিক তহবিল সরবরাহ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে হবে যাতে তারা সক্ষমতা বিনির্মাণ করতে পারে। সম্প্রতি জাতিসংঘ গৃহীত ‘বৈশ্বিক অভিবাসন কমপ্যাক্ট’টিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। আর এসকল পদক্ষেপের মাধ্যমেই কেবল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরপত্তার রক্ষার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে”।

উন্মুক্ত আলোচনার শুরুতে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তি বিনির্মাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিজ্ রোজম্যারি ডিকার্লো (Rosemary DiCarlo), ইউএনডিপি’র প্রশাসক আসিম স্টেইনার (Achim Steiner), বিশ্ব জলবায়ু সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী পাভেল কাবাত (Pavel Kabat), ইনভায়রনমেন্ট সিকিউরিটি প্রোগ্রামের গবেষণা সহকারি মিজ্ লিন্ডসে গেটস্হে (Lindsay Getschel)। নিরাপত্তা পরিষদেও জানুয়ারি মাসের সভাপতি  ডোমিনিকান রিপাবলিক এই সভার আয়োজন করে যেখানে প্রায় আশিটি দেশ বক্তব্য  প্রদান করে।

***